বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

ঢাকার দিকে ধেয়ে আসছে

amarsurma.com

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতীয়) এনটিএসি’র পরামর্শ যথা সময়ে কার্যকর না করায় এ পরিণতি

আমার সুরমা ডটকম:

সীমান্ত জেলাগুলোকে তছনছ করে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতীয়) ধেয়ে আসছে রাজধানী ঢাকার দিকে। এরই মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর চাপ। খুলনা ও রাজশাহীতে ডেল্টার সংক্রমণ ভয়াবহ পর্যায়ে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, রাজধানীতে করোনা রোগীর বাড়তি চাপ সামলাতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও শয্যা অনুপাতে রোগীর সংখ্যা বেশি হলে তা মোকাবিলায় বেগ পেতে হতে পারে। সরকারের করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (এনটিএসি) পরামর্শ যথা সময়ে কার্যকর না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে গত দুই মাস ধরে নাস্তানাবুদ সীমান্ত অঞ্চল। সীমান্ত বন্ধ ঘোষণার পরও অবাধে মানুষ ভারতে যাতায়াত করেছে। তারা শরীরে করোনার ডেল্টা ভাইরাস বহন করে নিয়ে এসে সারাদেশে ছড়িয়েছেন। গতকাল সীমান্তের জেলা রাজশাহীর ১০ জন এবং খুলনা বিভাগে ৩২ জন মারা গেছে। দুই বিভাগের হাসপাতালে চলছে করোনা রোগীদের আত্মীয়-স্বজনদের শুধুই হাহাকার।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে আর একটি মাত্র শিথিল উদ্যোগও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (এনটিএসি) সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। যখন আপনি লকডাউন আরোপের ক্ষেত্রে একদিনও দেরি করেন, তখন দেশজুড়ে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সরকার ইতোমধ্যেই অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জামিল বলেন, ডেল্টা সংক্রমণ ঢাকার দিকে বাড়তে থাকবে। আমরা যে ভয়টা করেছিলাম ঈদের সময়, ঢাকার সংক্রমণ জেলাতে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু দেখা গেছে যে, নতুন এ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টকে রিপলিস করে ফেলেছে। সুতরাং এবার ঘটনাটা ঘটেছে উল্টো। এবার জেলা শহর থেকে ঢাকায় ঢুকছে। তাই এখানে সংক্রমণটা বাড়তে থাকবে।

এমন অবস্থায় গত সপ্তাহে আইসিডিডিআরবি জানায়, ঢাকাতেও এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। ঘনবসতি হওয়ায় মহাঝুঁকিতে রাজধানী। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, দেশজুড়ে সংক্রমণের হার বিবেচনায় উদ্বেগে ফেলছে ঢাকাকে। তবে আগের অভিজ্ঞতা থেকে হাসপাতালগুলো প্রস্তুতি নিলেও সংক্রমণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা মোকাবিলা সহজ হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, যে সংখ্যায় শয্যা খালি আছে তার চেয়ে যদি রোগী বেশি হয় তাহলে কিন্তু সেটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে। আমরা যদি সংক্রমণের চেইন ভেঙে দিতে পারি, মানুষের কাছ থেকে মানুষের সংক্রমণ না হয় তাহলে কিন্তু এ শয্যা সংখ্যা তো খালিই থাকবে। শুরুতেই আপনারা চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হন তাহলে আমাদের যা আছে তাই দিয়েই বেশিসংখ্যক মানুষকে সেবা দিতে পারব।

জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য কমিটি গত ২৯ মে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের (ভারতীয়) সংক্রমণ শুরু হওয়া নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় তাৎক্ষণিকভাবে ‘লকডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু সরকার সময় মতো উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয় এবং সুপারিশটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা দেখায়। কমিটির সুপারিশের পর ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ৭টি জেলার কর্মকর্তাদেরকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়। আমের ব্যবসা ও মানুষের জীবিকা রক্ষার অজুহাতে লকডাউনের সিদ্ধান্তকে বিলম্বিত করা হয়। এখন লকডাউন আরোপ করা হলেও ইতোমধ্যে সেই ৭ জেলাসহ কয়েকটি জেলা করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ হাজার ৫৪৮ জন। নতুন শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৪১ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৮ লাখ ৫১ হাজার ৬৬৮ জন। সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশে গতকাল ২২ হাজার ২৩১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি জেলাকে উচ্চ ঝুঁঁকিপূর্ণ হিসেবে তখনই বিবেচনা করা হবে যখন সেখানে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হবে।

সীমান্ত জেলা খুলনার অবস্থা ভয়াবহ। এ ছাড়াও সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, জামালপুর ও দিনাজপুরে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে খুবই খারাপ।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান বলেন, যেহেতু দেশব্যাপী সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি, সে ক্ষেত্রে সারা দেশে লকডাউন দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। একইসঙ্গে লকডাউনকে ফলপ্রসূ করার জন্য প্রচুর সংখ্যায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু সরকার কখনোই সে রকম কিছু করেনি। সরকার লকডাউনের ব্যাপারে যা বলেছে, তা কার্যকর করে দেখায়নি। সরকারি উদ্যোগগুলো মূলত লোক দেখানো। ফল স্বরূপ মানুষ এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে চরম অনীহা প্রকাশ করছেন। তাছাড়া মহামারি ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকেই বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে দেশের মানুষ জীবন-জীবিকা হারাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, বিভিন্ন জেলায় সময় মতো লকডাউন আরোপ করা হয়নি। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ভাইরাসের সংক্রমণের হারকে কমিয়ে রাখার জন্য লকডাউন একটি কার্যকর উপায়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর এককভাবে এই সিদ্ধান্তটি নিতে পারে না। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অন্যান্য কর্তৃপক্ষও জড়িত। প্রকৃতপক্ষে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়িত হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com